দেশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় জরায়ুমুখের ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। শুরুতে ঢাকা জেলার ২০ লাখ কিশোরী তথা ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণি বা তার সমমানে পড়া ছাত্রী এবং ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ টিকা পাবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলার আরও প্রায় ১ কোটি কিশোরীকে এ টিকা দেয়া হবে।
ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভ (আইদেশি) এর উদ্যোগে ‘স্কুলভিত্তিক এইচপিভি (জরায়ু ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভাইরাস) সংক্রমণ, টিকাদান এবং জরায়ু ক্যানসার সচেতনতা প্রোগ্রাম’ শুরু উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপরোক্ত তথ্য জানানো হয়।
এতে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন আইদেশির লিড ও ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ডা. ফিরদৌসী কাদরী। সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রকল্প ব্যবস্থাপক এস এম আব্দুল্লাহ-আল-মুরাদ জানান, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা প্রায় পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত আছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে সাধারণত নারীরা যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসার (সারভিক্যাল ক্যানসার) চতুর্থ সর্বোচ্চ। বাংলাদেশি নারীদের ক্ষেত্রে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০২০ সালের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে ছয় লক্ষাধিক নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ মারা যান। এর প্রায় ৯০ শতাংশ মৃত্যুই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ঘটে থাকে।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো এইচপিভি টিকা বাংলাদেশে দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন গাইনোলোকোলোজিক্যাল অনকোলোজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন।
অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল প্যাপিলোমা ভাইরাস সোসাইটির নির্বাচিত এইচপিভি অ্যাম্বাসেডর কামরুন নাহার বলেন, এইচপিভি টিকা–সম্পর্কিত তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে খুব পরিচিত নয়। শিক্ষিত কর্মজীবী নারীরাও খুব বেশি জানেন না এ সম্পর্কে। এটা মোটেও কাম্য নয়। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও এ বিষয়ে জানতে হবে। কারণ, এইচপিভি ভাইরাস জরায়ু ক্যানসার ছাড়াও অন্যান্য ক্যানসারের জন্যও দায়ী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন, সেন্টার ফর ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসের প্রধান ডা. শাহ আলী আকবর আশরাফি, ইপিআই কর্মসূচির সাবেক প্রধান তাজুল ইসলাম এ বারি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য হলো প্রাসঙ্গিক, সাধারণ ও সহজভাবে এইচপিভি টিকা সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করা, যাতে সবাই ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন এবং এইচপিভি টিকার ঝুঁকি ও সুবিধা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে পারেন।